শিশুর অতিরিক্ত ঘুম হয়ে থাকে কি কারণে?
নবজাতকের ঘুম বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে থাকে প্রতিটি বাবা-মায়ের। স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে অধিক বেশি চিন্তিত থাকেন। বাচ্চা কতটুকু সময় ঘুমাচ্ছে, কতটুকু খাবার খাচ্ছে, তাদের আচার-আচরণ সঠিক রয়েছে কিনা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহিরের বিকাশ ঠিক ঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে।
আর তাই নবজাতকের ঘুম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে থাকেন অনেকেই। তাই নবজাতকের স্বাভাবিক ঘুমের ধরন, নবজাতকের ঘুমের চক্র এবং এর পরিবর্তন, সেই সাথে নবজাতক শিশুর ঘুম বেশি হওয়ার বিষয়ে জানাবো এ টু জেড। তাহলে আসুন আপনার শিশুর ঘুমের ব্যাপারে জানার উদ্দেশ্যে পড়ে ফেলা যাক, নবজাতকের ঘুম বেশি হওয়ার কারণ সমূহ সম্পর্কে খুঁটিনাটি।
নবজাতকের ঘুম বেশি হবার কারণ | কি কি কারণে নবজাতক শিশুর অতিরিক্ত ঘুম হয়ে থাকে?
সাধারণত নবজাতকের ঘুম বেশি হবার কারণ হচ্ছে তাদের শরীর ও মস্তিষ্কের দ্রুত বৃদ্ধি। একজন মানুষের ঘুম তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে ও স্বাস্থ্য ভালো রাখার কাজে সাহায্য করে থাকে। আর শিশুরা সাধারণত দিনে প্রায় 16 থেকে 20 ঘন্টা ঘুমায় কেননা ওই সময়টাতে নবজাতক শিশুদের শরীর ও মস্তিষ্ক দ্রুত বৃদ্ধি হয় ও বিভিন্ন অভ্যন্তরীন উন্নতি ঘটে।
অতএব এর উপর ভিত্তি করে এটা নিশ্চিত হতে পারেন যে, নবজাতক শিশু অতিরিক্ত ঘুমালে এতে কোন ক্ষতি হয় না। কেননা দ্রুত শারীরিক ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যই শিশুরা ঘুমিয়ে থাকে। আর হ্যাঁ, নবজাতকের ঘুমানোর সময় এবং ঘুমের ধরন নিয়ে মা বাবা হিসেবে হয়তো আপনি চিন্তিত থাকতে পারেন।
কেননা এটা সত্যিই ঠিক একদিকে নবজাতকের ঘুম প্রয়োজনীয়, অন্যদিকে কখনো কখনো এটি বেশি হওয়াতে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে এটা জানা গিয়েছে যে শিশুর অতিরিক্ত ঘুম থাইরয়েড ঝুঁকি বাড়ায়। আর তাই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি কোন শিশু সারাক্ষণই ঘুমিয়ে থাকে তাহলে তা হতে পারেন থাইরয়েডের আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ। কেননা বর্তমানে থাইরয়েডের সমস্যায় বিশ্বের আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ আর শিশুরা জন্ম থেকে থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছে কমবেশি।
যে কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকমতো পরিণত হয় না ফলে অপরিণত থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরে পর্যাপ্ত থাইরয়েডের যোগানো দিতে ব্যর্থ হয়। থাইরয়েডের সমস্যার কারণে কি কি ফেস করতে হয় সেটা হয়তো আপনি কম বেশি জানেন। তাই আপনার শিশুর ঘুমটি স্বাভাবিকের থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে হচ্ছে কিনা অবশ্যই বাবা মা হিসেবে আপনার খেয়াল রাখতে হবে।
যদি আপনার শিশু ২০ ঘন্টার বেশি সময় প্রায় প্রতিটা দিনই ঘুমায়, পাশাপাশি খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার শিশুর থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। আর হ্যাঁ শুধুমাত্র এই দুইটি লক্ষণ দেখে নয়, সাথে আরো দেখবেন আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হচ্ছে কিনা, অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা এছাড়াও ঠান্ডা বা স্নায়বিক বিকাশ দুর্বল রয়েছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। কেননা এগুলো লক্ষণ যদি থাকে তাহলে এটা থাইরয়েডের সমস্যা বলে ধারণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর তবে যদি আপনার শিশু শুধুমাত্র অন্যান্য সকল দিকে ঠিক থেকে দিনরাত মিলিয়ে ১৬ ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ কুড়ি ঘন্টা ঘুমায়। তাহলে মনে করতে পারেন এটা শুধুমাত্র শরীর ও মস্তিষ্কের দ্রুত বৃদ্ধির কারণে হচ্ছে। তাই নিশ্চিন্ত থাকুন। এখন আসুন জেনে নেই– বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা, বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে কেন, বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ, বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার কারণ অর্থাৎ নবজাতকের ঘুম কম হওয়ার কারণ কি কি সে সাথে নবজাতকের ঘুম কম হলে করণীয় কাজ কি এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত।
বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা
বড়দের তুলনায় শিশুদের ঘুমের প্রয়োজন অতিরিক্ত। তবে হ্যাঁ বয়স অনুযায়ী আপনার শিশুর ঘুম মূলত কত থেকে কত ঘন্টা হওয়া স্বাভাবিক সেটা জানতে নিজের কয়েকটি পয়েন্ট ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। কেননা এখানে আমরা এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর ঠিক কত থেকে কত ঘন্টা ঘুম পাড়া সর্বোত্তম তা সাজেস্ট করছি। এর থেকে বেশিও ঘুম পাড়তে পারে, যেটা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। যাইহোক বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকা দেখুন–
- ১ থেকে ৪ সপ্তাহ বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- ১ থেকে ৪ মাস বয়সী একটি শিশুর ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- ৪ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত শিশুর ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন
- ১ বছর থেকে ৩ বছরের একটি শিশুর ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে কেন | বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে কখনো কখনো স্বপ্ন দেখে চমকে উঠতে পারে আবার বাইরের কোন জড়োসড়ও আওয়াজ শুনেও আচমকা ঝাকুনি দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে পারে। তবে হ্যাঁ, যদি বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাকুনির বিষয়টি প্রতিদিনই কমবেশি লক্ষ্য করেন তাহলে এটা স্বাভাবিকভাবে নেওয়া একদমই উচিত নয়। এটি একটি রোগের লক্ষণ।
বলা হয়ে থাকে ঘুমের মধ্যে এমন ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠাকে হিপনিক জার্কস বলা হয়। যদি অনিদ্রা বা ঘুমের মধ্যে জাগনের সমস্যা নিয়মিত দেখা দেয় তাহলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। তবে হ্যাঁ, এই সমস্যাটি বড়দের মাঝে বেশি দেখা দেয় আর ছোটদের মাঝে খুব বেশি ক্ষতিকারক হিসেবে দেখা দেয় না। তবুও দুশ্চিন্তা এড়াতে এই লক্ষণটি যদি বারবার নজরে আসে তাহলে চিকিৎসকের সাথে আলাপ আলোচনা করাটাই শ্রেয়।
বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার কারণ
বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন ধরুন–
- ভয়ের অনুভূতি
- অতিরিক্ত উদ্দীপনা
- অসত্যিবা শারীরিক কোন সমস্যা
- পরিবেশগত কোনো কারণ
- নিয়মিত কোন রুটিন না থাকা
কিংবা শিশুদের টন্সিল, এডেনয়েড, কানের সংক্রমণ, শিশুদের রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। তাই বাচ্চাদের অতিরিক্ত ঘুমের থেকে অতিরিক্ত কম পরিমাণ ঘুম হওয়াটা বেশি চিন্তা জনক। তাই শিশুদের দিকে নজর রাখুন।
এখন আসুন আলোচনার শেষ মুহূর্তে বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার কারণ সম্পর্কিত কিছু বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই। পাশাপাশি এই প্রশ্নগুলো ছাড়াও আপনার যদি অন্য আরো কোন প্রশ্ন জানার থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।
জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর
১. নবজাতকের কতক্ষণ ঘুমানো স্বাভাবিক?
✓ নবজাতকের জন্য ১৪-১৭ ঘন্টা ঘুমানো স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। তবে, এটি কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। যেটা সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা পর্যন্ত পৌঁছায়।
২. নবজাতকের ঘুমানো সময় কি করতে হবে?
শিশু যখন ঘুমাচ্ছে তখন তার পাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত এবং ঘুমের পরিবেশ নীরব ও আরামদায়ক রাখা প্রয়োজন। তাই আপনি এই বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে পারেন।
৩. নবজাতকের ঘুম বেশি হলে কি করতে হবে?
✓ যদি নবজাতকের ঘুম বেশি মনে হয়, তবে তাকে জাগানোর চেষ্টা করা উচিৎ নয়। তবে, যদি এটি ক্রমাগত ঘটে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৪. কোন লক্ষণগুলো দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ?
✓ যদি নবজাতক সবসময় নিস্তেজ বা নিষ্ক্রিয় মনে হয়, খাওয়াতে সমস্য হয়, বা সংবেদনশীলতায় পরিবর্তন ঘটে এবং প্রত্যেকদিন কুড়ি ঘন্টার বেশি সময় ঘুমায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৫. নবজাতকের ঘুমানোর পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?
✓ শিশুর ঘুমানোর পরিবেশ নীরব, অন্ধকার, এবং আরামদায়ক হওয়া উচিত। তাপমাত্রা নাতিশীতোষ্ণ রাখার চেষ্টা করলে শিশুর জন্য সেটা আরও আরামদায়ক হতে পারে।
৬. নবজাতকের ঘুমের রুটিন কিভাবে তৈরি করা যায়?
✓ নিয়মিত ঘুমের সময়, খাদ্য গ্রহণ, এবং খেলার সময় বজায় রেখে একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করা যায়।
৭. নবজাতক কত সময় ঘুমায়?
✓ এক এক বয়সের নবজাতক শিশু নির্দিষ্ট এক এক সময় ঘুমায়। যেমন ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি জিরো থেকে তিন মাস বয়সের শিশুরা দিনে ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমাতে পছন্দ করে।