কিভাবে শিখবেন গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফ্রিলান্সিং করবেন ?
সূচনা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে গ্রাফিক ডিজাইন ব্যতীত পুরো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট অচল। আমরা আমাদের চোখের সামনে যা কিছু দেখি সবকিছুই ডিজাইন। একটি কোম্পানি তার সেলস বৃদ্ধি করতে ডিজাইনের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যানার পোস্টার বিলবোর্ড সোশ্যাল মিডিয়া কাভার টেলিভিশনের কমার্শিয়াল ইত্যাদি সবকিছুই গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজের ভিতরে পড়ে। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে তাই আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনের হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান। তাহলে অবশ্যই এটি আপনার জীবনে নেওয়া অন্যতম একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়া মোটেও সহজ বিষয় নয় একজন প্রফেশনাল এবং ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার হওয়ার জন্য মিনিমাম দুই বছর আপনাকে ডিজাইনের সাথে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?
আমাদের সকলের প্রতিপালক যা কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং আমরা যা কিছু দেখি সবগুলি একটি ডিজাইন। মানুষ যে সৃষ্টির চিত্র কর্ম তৈরি করে তাকে গ্রাফিক ডিজাইন বলে। ডিজাইন মানে পরিকল্পনা বা নকশা।কোন কিছু ছাপানোর জন্য যা আকা হয় তাই গ্রাফিক্স ডিজাইন। বর্তমানে শুধুমাত্র প্রিন্টিং করার জন্য যে জিনিসগুলি তৈরি করা হয় সেগুলি ছাড়াও ফেসবুক অ্যাডস ইনস্টাগ্রাম পোস্ট লোগো টিভি স্ক্রিন এর বিভিন্ন রকম ডিজাইন যা কিছুই রয়েছে সবকিছুতেই গ্রাফিক ডিজাইন বিদ্যমান। আপনি কি আঁকা আঁকি করতে ভালোবাসেন? যদি আপনি আঁকা আঁকি করতে ভালোবেসে থাকেন তাহলে গ্রাফিক ডিজাইন অবশ্যই আপনার জন্য। তাছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে সবচেয়ে বেশি কাজ পাওয়া যায় গ্রাফিক ডিজাইনে।
আমরা যখন বাজারে যাই বা কোন মার্কেটে যাই তখন আমরা প্রত্যেকটি দোকানে একটি লোগো দেখতে পাই। আমরা যখন টি-শার্ট বা যেই কোন পণ্য ক্রয় করি তখন আমরা ব্রান্ড দেখে ক্রয় করার চেষ্টা করি, প্রত্যেকটি কোম্পানি বা প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের একটি লোগো রয়েছে আর সেই লোগোটি একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক ডিজাইনার ছাড়া কখনো লোগো তৈরি করা সম্ভব নয়, দিন দিন ব্যবসা বাণিজ্য বেড়েই চলছে এবং গ্রাফিক ডিজাইনার এর চাহিদা বেড়েই চলছে। বর্তমানে আপনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হতে চাইলে এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে সেরা চিন্তা।
ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন এতো জনপ্রিয়?
আপনি কি চিন্তা করে দেখেছেন গ্রাফিক ডিজাইনিং কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্যারিয়ার হিসেবে এই গ্রাফিক ডিজাইন মানুষ কেনই এত শিখছে আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে অসংখ্য কারণ রয়েছে, যে কেউ চাইবে এমন একটি পেশা নির্ধারণ করা তার ভবিষ্যতের জন্য যেই স্কিলটি অর্জন করলে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। গ্রাফিক ডিজাইন ক্যারিয়ার হিসেবে কেন এত জনপ্রিয় তার কারণ গুলি জেনে আসি –
প্রথমত মানুষ স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখার পর তাদের পুঁথিগত বিদ্যার উপর অভিজ্ঞ হতে হয় তারপর তারা কাজ পায়। কিন্তু গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পূর্ণ একটি সৃজনশীল পেশা এই পেশায় আপনি যত বেশি দক্ষ হবেন ততই আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ। এখানে পুঁথিগত বিদ্যা তেমন একটা কাজে আসে না আপনি যদি সৃজনশীল হন তাহলে আপনি এই সেক্টরে উন্নতি করতে পারবেন। আপনি যদি সৃজনশীল না হন শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যায় আপনার জানা থাকে তাহলে এই সেক্টরে আপনি ভালো কিছু করতে পারবেন না। সৃজনশীলদের জন্য ক্রিয়েটিভ দের জন্য অবশ্যই গ্রাফিক ডিজাইন সবচেয়ে সেরা এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় এই স্কিলটি শিখার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করা খুবই সহজ।
সৃজনশীল পেশা – গ্রাফিক ডিজাইন সম্পূর্ণ একটি সৃজনশীল পেশার আপনার মূল হাতিয়ার এইখানে সৃজনশীল এবং ক্রিয়েটিভিটি আপনি এই সেক্টরে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন এবং অন্যান্য ক্রিয়েটিভ ডিজাইন গুলি দেখে আইডিয়া জেনারেট করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি সব সময় কপি করেন তাহলে কখনোই সৃজনশীল ডিজাইনার হতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই নিজের ক্রিয়েটিভিটি নিজের চিন্তা শক্তি দ্বারা নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করে নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করতে হবে তাহলে আপনি উন্নতি করতে পারবেন।
উচ্চতর চাহিদা – বর্তমান বিশ্বে ভিজুয়াল কন্টেন্ট সব থেকে বেশি পপুলার হচ্ছে সাথে সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও অনেক বেশি চাহিদা পূর্ণ হয়ে উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ব্যানার এবং প্রত্যেকটি বিজনেস রান করার জন্য অবশ্যই অ্যাড এর প্রয়োজন। গ্রাফিক ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে কারণ এই ইন্ডাস্ট্রিতে পেশাগত মানুষ হাতে গোনা কয়েকজন। আপনি যদি নিজেকে প্রফেশনাল করে তুলতে পারেন তাহলে আপনি বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারেন।
অধিক আয়ের সুযোগ – যেহেতু বর্তমান বিশ্ব ভিজুয়াল কন্টেন্ট এর দিকে ঝুঁকে পড়ছে প্রত্যেকটি বিজনেস শুরু করার পরেই তাদের ভিজুয়াল কন্টেন্ট এর প্রয়োজন হয়। ভিজুয়াল কনটেন্ট ছাড়া প্রথমে কোন বিজনেস রান করা সম্ভব নয়। আপনি হয়তো জানেন না যে অনেক কোম্পানি আছে যারা শুধুমাত্র লোগো ডিজাইন করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে থাকে। এবং তারা তাদের গ্রাফিক্স কন্টেন্ট এর জন্য ভালো পরিমাণ অর্থ দিয়ে ডিজাইনার হায়ার করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি আছে যারা তাদের প্রোডাক্টগুলো ভালোভাবে তাদের ওয়েবসাইটে ফুটিয়ে তুলতে একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের সাহায্য নিয়ে থাকে। এই গ্রাফিক ডিজাইন এর বাজার দিন দিন বেড়েই চলছে গ্রাফিক ডিজাইন করে আপনি অধিক থেকে অধিকতর আয় করতে পারবে, যদি আপনি একজন প্রফেশনাল এবং ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার হয়ে থাকেন।
উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নাই
গ্রাফিক ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে কোন উচ্চতর ডিগ্রিধারী হওয়ার প্রয়োজন নেই এই মার্কেটপ্লেসে অনেক মানুষ আছে যারা স্কুলের গণ্ডি ও ঠিকমতো পার করতে পারেনি এখানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহিণী পর্যন্ত সকলেই ডিজাইনের কাজের সাথে সংযুক্ত হতে পারে এখানে তেমন কোন এডুকেশনাল রিকোয়ারমেন্ট থাকে না তাই আপনি খুব বেশি একটি শিক্ষিত না হয়েও গ্রাফিক ডিজাইন শিখে ভালো একটি কেরিয়ার করতে পারবেন এখানে কেউ আপনার কাছে শুনতে চাইবে না আপনি কতটা শিক্ষিত এখানে শুধু চাইবে আপনি কতটা দক্ষ আপনি কতটা স্মার্ট আপনি কতটা ক্রিয়েটিভ আপনার দক্ষতা এবং ক্রিয়েটিভিটি অনুযায়ী আপনি এখানে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ অনেক কম, সুযোগ থাকলেও সেগুলি তেমন একটি মূল্যায়ন হয় না। গ্রাফিক ডিজাইন শিখে আপনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোতে রিমোট জব করার সুযোগ পাবেন। সেক্ষেত্রে আপনার যদি প্রতিভা থাকে তাহলে সেটা দেখিয়ে আপনি আপনার স্যালারি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করতে পারবে। এছাড়াও দেশি কোম্পানিগুলোতেও আপনি জব করতে পারবেন বড় বড় আইটি ইন্ডাস্ট্রি গুলি প্রতিভা দেখে গ্রাফিক ডিজাইনার হায়ার করে থাকে এডুকেশন নিয়ে সেখানে এত বড় সমস্যা হয় না।
কিভাবে শিখবেন গ্রাফিক্স ডিজাইন?
গ্রাফিক ডিজাইন আপনি বিভিন্ন ফ্রি কোর্স গুলি থেকেও শিখতে পারেন। গুগলের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি ফ্রিতে গ্রাফিক ডিজাইনের অনেক কোর্স পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে আপনি ফ্রিতেই এই স্কিলটি শিখে দক্ষ হয়ে উপার্জন করতে পারেন। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন পেইড কোর্স করতে পারেন। বাংলাদেশে অনেকগুলি ই লার্নিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যারা গ্রাফিক ডিজাইন ভালোভাবে শিখিয়ে থাকে, আপনি চাইলে সেখানে সামান্য কিছু অর্থের মাধ্যমে কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারে। একটি জিনিস মনে রাখবেন কোর্স সম্পূর্ণ করেই এখান থেকে ইনকাম করতে পারবেন না। অবশ্যই আপনাকে এক থেকে দুই বছর সময় এক্সপার্ট হতে হবে এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে তারপর পরবর্তীতে আপনি এখান থেকে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারবে। ইনশাআল্লাহ।
আপনার কাছে যদি অর্থ নাও থাকে আপনি যদি আরো সহজে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে চান তাহলে আপনি ইউটিউব এর সাহায্য নিতে পারেন। ইউটিউবে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ফ্রি কোর্স এবং প্লে লিস্ট রয়েছে যারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রাফিক ডিজাইন শিখিয়ে থাকে। আপনি ইউটিউবে সার্চ করে গ্রাফিক ডিজাইনের ভালো ভালো কিছু ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। এতে করে আপনি গ্রাফিক্সের ভাল দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন এবং পেইড কোর্স এর কোন প্রয়োজন পড়বে না।
কিভাবে ফ্রিলান্সিং করবেন ?
গ্রাফিক ডিজাইন শিখে সকলেই সর্বপ্রথমে ফ্রিল্যান্সিং করতে চায়, গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে অনেকগুলি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করতে পারবেন। সর্বপ্রথমে রয়েছে freelancer এই ওয়েবসাইটটিতে কনটেস্ট ওয়াইজ ডিজাইন এর প্রজেক্ট সাবমিট করে থাকে আপনি সেখানে কন্টাস্ট করে উপার্জন করতে পারেন। অথবা আপনি Fiverr থেকে আপনার সার্ভিস এর GIG দিয়ে সেখান থেকে ক্লাইন্ট জেনারেট করে উপার্জন করতে পারে। এছাড়াও রয়েছে Design hill, Kwork , people per hour, এইরকম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলির মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো পরিবারে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সব চেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে Fiverr ও Upwork এই দুইটি ওয়েবসাইটে সবচেয়ে বেশি ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় এবং তারা সবচেয়ে বেশি মার্কেটিং করে থাকে। আপনি আপনার সর্বোচ্চ অর্থ উপার্জন করার জন্য এই দুইটি বড় বড় মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারে। এই মার্কেটপ্লেস গুলিতে কাজ করলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ অর্থ পেয়ে থাকবেন। অবশ্যই আগে আপনাকে প্রফেশনাল হতে হবে যদি আপনি ভালোভাবে প্রফেশনাল হতে পারেন তাহলে আপনি এইখান থেকে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
পরিশেষে বলতে চাই – গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরটি এত সহজ নয়, এখান থেকে আপনি যেরকম ভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন এটি শিখাও ততটা কষ্টকর ও কঠিন। এখানে এক্সপার্ট হতে হলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে দুইটি বছর। দুই বছর যদি আপনি সর্বোচ্চ সময় দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে এক্সপার্ট করে নিতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি এই সেক্টর থেকে ইনকাম করতে পারবেন< অনেকেই ভাবে শুধুমাত্র কাজ শিখব তারপরে ইনকাম করব এরকম চিন্তা কখনোই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন না। আপনার ক্যারিয়ার সফল হোক আপনার জন্য শুভকামনা।