মার্কেটিং এর কৌশল | জানুন মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে খুঁটিনাটি
মার্কেটিং এর কৌশল জানতে চান অনেকেই। কেননা বর্তমানে মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জ সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে। আর তাই আপনি যদি একজন সফল মার্কেটার হতে চান তাহলে অবশ্যই মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে খুঁটিনাটি।
এ কারণেই আজকের এই নিবন্ধে আমরা মার্কেটিং এর কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। আশা করছি মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে আমরা যে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেবো সেটা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কাজে লাগবে। তাহলে আসুন মার্কেটিং এর কৌশল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় অবগত হওয়া যাক।
মার্কেটিং এর কৌশল | মার্কেটিং ব্যবসার কৌশল
মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল এমন কৌশলগত প্রচেষ্টা, যা বিভিন্ন কার্যক্রম এবং টুলস ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং কার্যক্রমকে বিস্তৃত করে। এই কৌশলগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে লক্ষ্য থাকে একই: আপনার ব্যবসাকে বাজারে আরো ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং গ্রাহকদের আকর্ষণ করা। আর এই দুইটি কাজ সম্পাদনের জন্য সচরাচর নিম্ন বর্ণিত কাজগুলো করতে হয়। সেগুলো হলো —
✓ লক্ষ্য নির্ধারণ ও বাজার গবেষণা
সত্যি বলতে- একটি সফল মার্কেটিং কৌশল শুরু হয় সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে। আপনার লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করার জন্য আপনাকে জানতে হবে আপনি কী অর্জন করতে চান এবং কোন পথে এগোতে চান। আর তাই মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আর লখন নির্ধারণের সময় অবশ্যই বাজার গবেষণা করা।
কেননা বাজার গবেষণা আপনাকে আপনার কাস্টমারদের সম্পর্কে জানতে এবং তাদের চাহিদা বুঝতে সাহায্য করে। এতে আপনি কাস্টমার সেগমেন্টেশন করতে পারবেন, যা আপনার কৌশলকে আরো কার্যকর করে তুলবে। তাই সর্বপ্রথম নিজের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন অতঃপর পরবর্তী বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে নজর দিন।
✓ ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি
ব্র্যান্ডিং আপনার ব্যবসার পরিচিতি বাড়াতে সহায়তা করবে। একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড স্টোরি তৈরি করে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় থেকে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এজন্য ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। পাশাপাশি আয়ত্ত করুন–
- কন্টেন্ট মার্কেটিং কৌশল — কন্টেন্ট মার্কেটিং হলো এমন একটি কৌশল যেখানে বিভিন্ন প্রকারের কন্টেন্ট তৈরি এবং শেয়ার করা হয় যা আপনার টার্গেট দর্শকদের আকর্ষণ করে। ব্লগিং, ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO) — SEO হলো আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে ভালভাবে র্যাঙ্ক করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। সঠিক কীওয়ার্ড রিসার্চ, অন-পেজ এবং অফ-পেজ SEO কৌশল আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আর আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট র্যাঙ্ক করাতে পারেন তাহলে খুব সহজেই ব্র্যান্ড এর প্রচার দ্রুত করা সম্ভব হবে। মনে রাখবেন এভাবে আপনার ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক আসবে যেটা আপনার সাইট এবং আপনার মার্কেটিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো।
- ইমেইল মার্কেটিং কৌশল— মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশলের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় বা পদ্ধতি হলো ইমেইল মার্কেটিং। এই মার্কেটিং একটি অত্যন্ত কার্যকর মার্কেটিং মাধ্যম, যা আপনার গ্রাহকদের সরাসরি লক্ষ্য করে। ইমেইল তালিকা তৈরি এবং ব্যক্তিগতকৃত ইমেইল প্রচারণা আপনাকে গ্রাহকের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করবে। তাই মার্কেটিং বৃদ্ধির জন্য এই কৌশলটি অবলম্বন করতে পারেন যে কেউ। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজিং কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যা সম্পর্কে আমরা নিচে অল্প বিস্তর আলোচনা করছি।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোও আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন এবং অর্গানিক ও পেইড সোশ্যাল মিডিয়া কৌশলগুলি আপনার ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে পারে। মনে রাখবেন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্র্যান্ড প্রচারে অনেকভাবে সাহায্য করে। যেমন ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি, টার্গেটকৃত অডিয়েন্স পৌঁছানো, ব্র্যান্ডের পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠা করন এবং প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন এবং অফার প্রদানসহ প্রভৃতি।
আর তাই মার্কেটিং কৌশল বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন এখন আপনি যদি একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চান সেক্ষেত্রে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমে ব্যবসার প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ট্রিকস খাটাতে হবে। শুধুমাত্র অফলাইনে প্রচারণার মাধ্যমে আজকাল অনেক বড় ব্যবসায়ী হওয়া কঠিন। কেননা মানুষ অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর আর তাই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসার বা ব্র্যান্ডের প্রচারণা করতে হবে। আর তবেই আপনি মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল গুলো কাজে লাগিয়ে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন একজন সফল মার্কেটার হিসেবে।
পেইড এডভার্টাইজিং কৌশল
পেইড এডভার্টাইজিং হলো আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের একটি দ্রুততম মাধ্যম। গুগল এডওয়ার্ডস, সোশ্যাল মিডিয়া এডস এবং রিটার্গেটিং এডস সহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি আপনার কাস্টমার বেস দ্রুত বাড়াতে পারেন। আর তাই মার্কেটিং এর কৌশল গুলোর মধ্যে পেইড অ্যাডভার্টাইজিং কৌশল সাজেস্ট করছি আপনাদেরকে। যেটা আপনাদের মার্কেটিং জীবনে কাজে লাগবে। এখন আসুন মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল এর সাথে সম্পর্কযুক্ত আরো কিছু বিশেষ পয়েন্ট এবং সেগুলো সম্পর্কে অল্প বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
✓ গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (CRM)
CRM সফটওয়্যার ব্যবহার করে আজকাল গ্রাহকদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়। আর আমরা জানি মার্কেটিং বৃদ্ধির জন্য গ্রাহকদেরকে কনভেন্স করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সহজেই আপনি আপনার গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গভীর করতে পারবেন। এটি আপনাকে গ্রাহকের সন্তুষ্টি বাড়াতে এবং তাদের পুনরায় আসতে উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করবে। তো মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে অবশ্যই এই উপায়টি অবলম্বন করতে পারেন।
✓ বিপণন অটোমেশন
বিপণন অটোমেশন টুলস এবং সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে আজকাল মার্কেটিং প্রচারণাকে আরো কার্যকর এবং দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। আর এটি সময় এবং সম্পদের অপচয় রোধ করতে সহায়ক ভূমিকাও রাখছে। আপনিও মার্কেটিং বৃদ্ধির জন্য বিপণন অটমেশন টুলস ও সফটওয়্যার এর শরণাপন্ন হতে পারেন এবং আপনার কাজ হাসিল করে নিতে পারেন স্বল্প সময়ের মধ্যে।
✓ মোবাইল মার্কেটিং কৌশল
এটা নিশ্চয়ই আপনি কম বেশি হলে জানবেন যে– মোবাইল মার্কেটিং হলো বর্তমান সময়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল। মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট, মোবাইল এপ্লিকেশন এবং এসএমএস মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন খুব সহজেই। আর তাই আমরা সাজেস্ট করব মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে মোবাইল মার্কেটিং কৌশলটি অবলম্বন করার। আশা করি এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণা বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
✓ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কৌশল
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি পণ্য বা সেবার প্রচারণা করতে পার্টনারদের ব্যবহার করে কমিশনের বিনিময়ে বিক্রয় বাড়ানোর কৌশল। সঠিক পার্টনার নির্বাচন এবং কার্যকর প্রচারণা এখানে সফলতার চাবিকাঠি। আর মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এফিলিয়েট মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন করে আপনি অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন। যাই হোক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা অল্প থেকে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এ সম্পর্কিত আরো একটি পোষ্ট করতে পারেন। এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট কেডিপি সম্পর্কেও ধারণা নিতে ভিজিট করতে পারেন সাজেস্ট কৃত লিঙ্কে।
মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সেলস বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়
আপনি যদি সফল ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে অবশ্যই অনলাইনে এবং অফলাইনে আপনার টার্গেটকৃত পণ্যটি বিক্রির জন্য ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অর্থাৎ সেলস বৃদ্ধির জন্য সাধারণত যে কাজগুলো করতে পারেন সেগুলো হলো —
- একটা শক্তিশালী বাজারজাতকরণ প্রচারণার পরিকল্পনা তৈরি
- প্রোডাক্ট এর মান বৃদ্ধি এবং দাম সাশ্রয়ী
- সম্ভাব্য গ্রাহকদের সংখ্যা বৃদ্ধি
- বিক্রয় এবং বাজারজাতকরণ এর মধ্যে সমান বয়স সাধন
- বিক্রয় কমিশন বা প্রণোদনা প্রদান করা
- নতুন গ্রাহক খুঁজে বের করা
- গ্রাহকদের সামনে নিজের প্রোডাক্ট সম্পর্কে সত্য তথ্য প্রকাশ করা
- গ্রাহকদের কে কনভেন্স করার চেষ্টা করা সর্বোচ্চভাবে
- শিশু ক্রয়কারী এলাকা বা মার্কেট নির্ধারণ করা সেই সাথে একটি বিক্রয় আউটসোর্সিং কোম্পানির সাথে কাজ করা বা অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে নজর দেওয়া।
এখন আসুন জেনে নেই– মার্কেটিং কত প্রকার এবং অনলাইন মার্কেটিং কৌশল নিয়ে আরো কিছু।
মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?
মার্কেটিং সাধারণত দুই প্রকার। যথা—
- অনলাইন মার্কেটিং এবং
- অফলাইন মার্কেটিং
অনলাইন মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে– ইমেইল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সহ প্রভৃতি।
অন্যদিকে অফলাইন মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে– প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, রেডিও বিজ্ঞাপন এবং অনগ্রউন্ড প্রমোশন সহ প্রভৃতি।
অনলাইন মার্কেটিং কৌশল |অনলাইন মার্কেটিং এর কলাকৌশল গুলো কি কি?
অনলাইন মার্কেটিং অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। তবে অনলাইন মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী কিছু মার্কেটিং সোর্স হচ্ছে—
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- ইমেইল মার্কেটিং
- অ্যাফিলিয়েটলি মার্কেটিং
- আদলেটিক্স এবং ডেটা বিশ্লেষণ
- ওয়েব মার্কেটিং সহ প্রভৃতি।
এক কথা, আপনি যদি মার্কেটিং এরকম কৌশল অবলম্বন করতে চান বা মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে আরো ধারণা অর্জন করতে চান তাহলে আপনাকে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মার্কেট নিয়ে অনেক বেশি ঘাটাঘাটি করতে হবে।
মূলত এনালাইসিস করার মাধ্যমে আপনি নতুনত্ব অনেক মার্কেটিং বৃদ্ধির কৌশল আয়ত্ত করতে পারবেন বা নিজেই তৈরি করতে পারবেন। তাই একজন সফল বিজনেসম্যান হওয়ার জন্য অর্থাৎ মার্কেটিং এ সফল হওয়ার জন্য জানুন, জানুন এবং জানুন। মানে জানার পরিধি বৃদ্ধি করুন। ব্যাস এতটুকুই।
তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল মার্কেটিং এর কৌশল নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করছি আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি অনেক কিছু জানতে পারছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দেবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।